আমার ব্লগ তালিকা

শুক্রবার, ১৭ জুলাই, ২০১৫

ইসলামে নান্দনিক শ্রবণীয় শিল্প



ডঃ উসূফ আল কারযাভী



2 Votes

ইসলাম সব সময় সুন্দরের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করে থাকে এবং মানুষের সেই ইন্দ্রকে জাগ্রত করতে আগ্রহী যা তাকে বিভিন্ন ভাবে সৌন্দর্য উপভোগ করতে শেখায়।
কিছু কিছু ‘সুন্দর’ শ্রবণইন্দ্রের কাছে ধরা পড়ে, আবার কিছু কিছু ‘সুন্দর’ তার দর্শন ইন্দ্রের কাছে আর কিছু অপরাপর ইন্দ্রের কাছে ধরা পড়ে। এখানে “শ্রবণীয় সুন্দর্য” আলোচনা করা হবে, অর্থাত্ গান সম্পর্কে, হোক বাজনা সহকার আর বাজনা বিহীন।

গান ও বাজনা সম্বন্ধে ইসলামের হুকুম কি?
এটা এমন একটা প্রশ্ন যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে শুনা যায়। এটা এমন একটা প্রশ্ন যার জবাব দানে আজকে সমগ্র মুসলিম জাতি দ্বিধাবিভক্ত। তাদের জবাবের বিভক্তির কারণে তাদের আচার আচরণও বিভিন্ন ধরণের। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সব ধরণের গান ও বাজনা কান পেতে শুনে একথা বলে যে, তা হালাল জীবনের অপরাপর হালাল বস্তুর মতো, যা আল্লাহ পাক তার বান্দাদের জন্য হালাল করেছেন।
আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ যে কোন গানের শব্দ পেলে রেডিও বন্ধ করে দেয় বা নিজের কান বন্ধ করে নেয়। তারা বলে গান হলো শয়তানের বাঁশি ও বেহুদা কথা, যা আল্লাহর যিকির ও নামাজ থেকে বিরত রাখে, বিশেষত গায়ক যদি কোন নারী। কারণ তাদের মত নারীর কণ্ঠস্বর গান ছাড়াই সতরের অন্তর্ভুক্ত, আর যদি তা গানে হয় তাহলে(তা সহজে অনুমেয়)। তারা তাদের এ অভিমতে পক্ষে আলকোরানের কতিপয় আয়াত, কিছু হাদীস ও কিছু আলেমের অভিমত ও উক্তি দ্বারা দলিল দিয়ে থাকেন।
আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ যে কোন ধরণের বাজনা প্রত্যাখ্যান করেন, এমন কি রেডিও ও টিভির সংবাদের পূর্বে প্রচারিত বাজনা পর্যন্ত।
তৃতীয় আর একদল এই দুইদলের মধ্যে দ্বিধা দন্দ্বে ভোগেন। তারা কখনো একদলের পক্ষে কখনো অন্যদলের পক্ষে অবস্থান নেয়। আর এরা অবশ্য এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামের আলেমদের কাছ থেকে একটা মনে প্রশান্তি আনয়ণকারী চূড়ান্ত ফায়সালা কামনা করে। যা মানুষের আবেগ অনুভূতি ও দৈনন্দিন জীবনের সাথে সম্পৃ্ক্ত। বিশেষত শ্রবণীয় ও দর্শনীয় প্রচার মাধ্যম মানুষের বাড়ি ঘরে ইচ্ছায় ও অনিচ্ছায় প্রবেশ করার পর, এবং তার গান ও মিউজিক বাধ্য ও অবাধ্য ভাবে তাদের শ্রবণ ইন্দ্রকে আকর্য়ণ করার পর।
বাদ্যযন্ত্র তথা মিউজিকসহ গান ও বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গান এমন একটি বিষয় যা নিয়ে ইসলামের আলেমদের মধ্যে তর্ক বিতর্ক দীর্ঘ দিন থেকে চলছে।তারা কিছু বিষয়ে ঐক্যমত্যে উপনিত হয়েছেন আবার কিছু বিষয়ে মতদ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছেন।
তারা ঐক্যমত্যে উপনীত হয়েছেন ঐ সব গান হারাম হবার ব্যাপারে যাতে অশ্লীলতা ও ফাসেকী রয়েছে, এবং যা গুনাহের কাজে উদ্ভুদ্ধ করে। কারণ গানতো মূলত কথাই- তার মধ্যে যা ভালো তা ভালো আর যা মন্দ তা মন্দই। যে সব উক্তিতে হারাম কিছু রয়েছে তাও হারাম। অতএব তার সাথে যদি ছন্দ সূর ও হৃদয়গ্রাহী কিছু থাকে তাহলে তার অবস্থা কিরূপ হবে?(তা সহজে অনুমেয়)।
তেমনি ভাবে তারা আরও ঐক্যমত্যে উপনীত হয়েছেন পূর্বোক্ত বিষয় মুক্ত গান হালাল হবার ব্যাপারে, যা বাদ্যযন্ত্র মুক্ত স্বভাব সূলভ ভাবে অনুত্তেজিত করণার্থে গাওয়া হয়ে থাকে। আর তাও বৈধ আনন্দ বিনোদনের স্থানে। যথা বিয়ের অনুষ্ঠানে, কাউকে স্বাগত জানাবার কালে এবং ঈদের দিন ইত্যাদিতে। তবে শর্ত হলো তাও পর পুরুষের সামনে কোনো নারীর কন্ঠে হওয়া চলবেনা।
এ প্রসঙ্গে কিছু সুস্পষ্ট কুরান ও হাদিসের বাণী রয়েছে যা আমরা পরে উল্লেখ করব।
এছাড়া বাকি গানের ব্যাপারে তারা সুস্পষ্ট মতদ্বন্দ্বে লিপ্ত। তাদের মধ্যে কেউ সব ধরনের গানকে হালাল মনে করেন তা বাদ্যযন্ত্র সহ হোক আর বাদ্যযন্ত্র বিহীন হোক। আর কেউ কেউ সব ধরণের হারাম ঘোষণা করেছেন তা বাদ্য যন্ত্র সহ হোক বা বাদ্য যন্ত্র বিহীন হোক এমন কি তা শুনা পর্যন্ত কবীরা গুনাহ বলেও উল্লেখ করেছেন।
বিষয়টির গুরুত্বের কারণে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা আমাদের কর্তব্য বলে মনে করি। এবং বিভিন্ন দিক থেকে এ প্রসঙ্গে আলোচনা পর্যালোচনা করা আবশ্যক মনে হয়, যাতে মুসলমানেরা এর মধ্য হতে হারাম থেকে হাললকে আলাদা করে নিতে পারেন এবং অকাট্য দলিলের অনুসরণ করতে পারেন। তাদেরকে যেন কারো কথার তাকলীদ বা অন্ধ অনুসরণ করতে না হয়। এর মাধ্যমেই তারা সুস্পষ্ট দলিল নির্ভর এ দ্বীনি বিষয়ে অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন হতে পারেন।
চলবে…।
মূলত সব কিছু হালাল
ইসলামের আলেমগণ এরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, মূলত যে কোন বস্তু হালাল। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
هُوَ الَّذِي خَلَقَ لَكُم مَّا فِي الأَرْضِ جَمِيعاً
তিনিই সে সত্ত্বা যিনি সৃষ্টি করেছেন তোমাদের জন্য যা কিছু জমীনে রয়েছে সে সমস্ত।
He it is Who created for you all that is on earth. ( সূরা আল-বাকারা ঃ ২৯)
কাজেই কোন কিছু সুস্পষ্ট বিশুদ্ধ নাস তথা আল-কুরআন ও সহীহ হাদিস কিংবা নির্ভরযোগ্য প্রমাণীত ইজমা ছাড়া হারাম হতে পারেনা। অতএব কোন নাস (আল-কুরআন ও সহীহ হাদিস) ও ইজমা না থাকলে, অথবা কোন কিছুকে হারাম ঘোষণা করে কোন সুস্পষ্ট নাস আছে কিন্তু তা সহীহ না হলে, কিংবা সহীহ কিন্তু সুস্পষ্ট না হলে সে নাস ঐ বস্তু হালাল হবার ব্যাপারে কোন প্রভাব ফেলবেনা। বস্তুটি বিস্তৃত হালালের গণ্ডিতেই বাকি থাকবে। কারণ আল্লাহ তা’আলা বলেন-
وَقَدْ فَصَّلَ لَكُم مَّا حَرَّمَ عَلَيْكُمْ إِلاَّ مَا اضْطُرِرْتُمْ
অথচ আল্লাহ ঐ সব জন্তুর বিশদ বিবরণ দিয়েছেন, যেগুলোকে তোমাদের জন্যে হারাম করেছেন; কিন্তু সেগুলোও তোমাদের জন্যে হালাল, যখন তোমরা নিরুপায় হয়ে যাও।
while He has explained to you in detail what is forbidden to you, except under compulsion of necessity (সূরা আল-আন’আম ১১৯)
আর রাসূল (স)বলেন, যা আল্লাহ তা’আলা তার কিতাবে হালাল করেছেন তা হালাল, আর যা হারাম করেছেন তা হারাম। আর যে সব বিষয়ে নিরবতা অবল্বন করেছেন তা মাফকৃত। সুতরাং তোমরা আল্লাহর মাফকৃত বস্তু গ্রহণ করো। কারণ আল্লাহ তা’আলা কোন কিছু ভুলে যাননি। অতপর তিনি তেলাওয়াত করেছেন- نَسِيًّا وَمَا كَانَ رَبُّكَ “সবই তাঁর এবং আপনার পালনকর্তা বিস্মৃত হওয়ার নন। and your Lord is never forgetful, সূরা মারিয়াম ৬৪ । (হাদিসটি হাকেম আবুদ দারদা থেকে বর্ণনা করেন এবং সহীহ বলে মন্তব্য করেন, হাদিসটি বাযযারও বর্ণনা করেছেন।)
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ তা’আলা কিছু কাজ ফরয করে দিয়েছেন তোমরা তা তরক করোনা। আর কিছু ব্যাপারে সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছেন তোমরা সে সীমা লংঘন করোনা। আর তোমাদের দয়া পরবশ হয়ে (ভুলে গিয়ে নয়) কিছু বিষয়ে নিরব থেকেছেন সে সব বিষয়ে অনুসন্ধান করোনা।
(দারেকুতনী কর্তৃক আবু সালাবা আল খশনী থেকে বর্ণিত, হাফেজ আবু বকর মোসআলী তার আমানী নামক গ্রন্থে আর নব্বী তার আরবাঈনে হাদিসটি হাসান বলে মন্তব্য করেছেন।)
এটাই যদি শরীয়াতের মূলনীতি হয়, তাহলে কোন নাস বা দলিলের ওপর ভিত্তি করে গান হারাম ঘোষণাকারীরা তাদের অভিমত ব্যক্ত করেছেন ? আর গান বৈধ ঘোষণাকারীদেরই বা এ ব্যাপারে অবস্থান কি ? তা জানা অবশ্যক।

গান হারাম ঘোষণাকারীদের দলিল ও তার পর্যালোচনা
ক. গান হারাম ঘোষণাকারীরা ইবনে মাসউদ ইবনে আব্বাস ও কোন কোন তাবেয়ী থেকে বর্ণিত এক বর্ণনার উপর নির্ভর করেছেন। তারা নিম্নোক্ত আল্লাহ তা’আলার বাণীর উপর ওপর নির্ভর করেই গান হারাম ঘোষণা করেছেনঃ-
وَمِنَ النَّاسِ مَن يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَن سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِينٌ
একশ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রূপ করে। এদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি।
And of mankind is he who purchases idle talks to mislead from the Path of Allâh without knowledge, and takes it by way of mockery. For such there will be a humiliating torment (সূরা লোকমান ঃ ৬)
তারা আলোচ্য আয়াতের لَّ عَن سَبِيلِ (লাহুল হাদিস) বা “অবান্তর কথা বার্তা” এর ব্যাখ্যা করেছেন গান বলে।
ইবনে হাযম বলেন, কয়েকটি কারণে এই ব্যাখ্যাটি আমার কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়। ১. রাসুল সাঃ ছাড়া আর কারো কথা হজ্জত বা গ্রহণ যোগ্য নয়। ২. এই ভাবে ব্যাখ্যা কারীরা অপরাপর সাহাবী ও তাবেয়ীদের ব্যাখ্যার বিরোধীতা করেছেন। ৩. স্বয়ং এই আয়াতের বাক্যাবলী তাদের এ ব্যাখ্যা ও দলিলকে বাতিল করে। কারণ তাতে রয়েছে- “ এক শ্রেণীর মানুষ আছে যে যারা আল্লাহ তাআলার পথ থেকে গোমরাহ করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথা-বার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে”।

তিনি আরও বলেন, কোন মানুষ যদি আল কোরানও খরিদ করে তার দ্বারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে গোমরাহ করার জন্য এবং তাকে নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করার জন্য তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলা এ আয়াতে এইরূপ কর্মের নিন্দা করেছেন। আল্লাহ কখনো যারা অবান্তর কথা-বার্তা আনন্দ বিনোদন এবং মনে প্রশান্তি আনয়নের জন্য খরিদ করে, আল্লাহর পথকে গোমরাহ করার জন্য খরিদ করেনা। তাই আল্লাহ এখানে তাদের নিন্দা করেন নি। অতএব তাদের আয়াতের ঐ ব্যাখ্যার সাথে আয়াতের কোন সম্পর্ক থাকাটাই বাতিল বলে প্রমাণিত হলো।তেমনি ভাবে যারা কোরান তেলাওয়াতে ব্যস্ত থেকে কিংবা হাদিস অধ্যায়নে ব্যস্ত অথবা কথা-বার্তায় ব্যস্ত থেকে অথবা গান-বাজনা নিয়ে ব্যস্ত থেকে কিংবা অন্য কোন কাজে ব্যস্ত থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে নামাজ ছেড়ে দেয় সেও ফাসিক- আল্লাহর নাফরমান। আর যে উপরোক্ত কাজে ব্যস্ত থেকেও কোন ফর্য কাজে গাফেল হয়ে পড়েনা তিনি সত্কর্মশীল । (দলিল- ইবনে হাযম, আল মুহাল্লা, মুনীরিয়া ৯ পৃ.৬০)
খ. তারা মুমিনের প্রশংসায় উল্লেখিত আল্লাহ তা’আলার নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা দলিল দিয়েছেন,-
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ
আর যখন অনর্থক কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে বিমুখ হয়ে পড়ে।
And when they hear Al¬Laghw they withdraw from it and say: (সূরা আল-কিসাস ঃ ৫৫)
তাদের মতে গান যা অনর্থক কথা-বার্তার অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তার থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব।
এ বক্তব্যের জবাবে বলা যায়, এ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ হলো এখানে লাগভ বা অনর্থক কথা-বার্তা বলতে গালা-গালী ও তিরস্কার জাতীয় মন্দ কথা বুঝানো হয়েছে। আয়াতের বাকি অংশও তাই প্রমাণ করে, আল্লাহ তা’আলা বলেন,-
وَإِذَا سَمِعُوا اللَّغْوَ أَعْرَضُوا عَنْهُ وَقَالُوا لَنَا أَعْمَالُنَا وَلَكُمْ أَعْمَالُكُمْ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ لَا نَبْتَغِي الْجَاهِلِينَ
আর যখন অনর্থক কথাবার্তা শ্রবণ করে, তখন তা থেকে বিমুখ হয়ে যায় এবং বলে, আমাদের জন্যে আমাদের কাজ এবং তোমাদের জন্যে তোমাদের কাজ। তোমাদের প্রতি সালাম। আমরা অজ্ঞদের সাথে জড়িত হতে চাই না।। (সূরা আল-কিসাস ঃ ৫৫)
মূলত আয়াতটি আল্লাহর বান্দাদের প্রশংসায় আল্লাহ তা’আলার নিম্নোক্ত আয়াতের মতোই,-
وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
যখন অজ্ঞরা তাদের সম্বোধন করে তখন তারা বলে তোমাদের প্রতি সালাম ।
when the foolish address them they reply back with mild words of gentleness. (সূরা আল-ফোরকানঃ৬৩)
যদি আমরা ধরে নেই যে, উক্ত আয়াতের লাগভ বা অনর্থক কথা-বার্তা গানকেও শামিল করে তাহলেও আমরা দেখতে পাই যে, আয়াতটি গান শুনা থেকে বিরত থাকা মুস্তাহাব বা উত্তম ও প্রশংসনীয় কাজ বলে প্রমাণ করে। গান শুনা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব প্রমাণ করেনা।
“লাগভ” শব্দটি “বাতিল” শব্দের মতোই অনর্থক বেফায়দা বুঝায়, বেফায়দা কিছু শুনা কখনও হারাম নয়, যতক্ষণ না তার কারণে কোন হক বিনষ্ট হয়, কিংবা তা কোন ওয়াজিব কর্ম থেকে বিরত রাখে।
ইবনে জোরাইজ থেকে বর্ণিত যে, তিনি গান শুনা বৈধ মনে করতেন। তাকে জিজ্ঞাস করা হলো, গান কিয়ামত দিবসে আপনার সত্কর্মের অন্তর্ভুক্ত হবে, না কুকর্মের অন্তর্ভুক্ত হবে? তিনি জবাবে বলেন, তা না সত্কর্মের আর না কুকর্মের অন্তর্ভুক্ত হবে, কারণ তাতো অনর্থক বা লাগভ কথারই মতোই। আল্লাহ তা’আলা বলেন,-
لاَ يُؤَاخِذُكُمُ اللّهُ بِاللَّغْوِ فِي أَيْمَانِكُمْ
আল্লাহ তা’আলা তোমাদেরকে তোমাদের (লাগভ) অনর্থক শপথের জন্যে দায়ী করবেন না।
Allâh will not punish you for what is uninentional in your oaths, (সূরা আল-বাকারা ঃ ২২৪, সূরা আল মায়েদা ঃ ৮৯)
ইমাম গাজ্জালী বলেন, যদি আল্লাহর নামে অর্থহীন শপথ করার কারণে- যাতে দৃঢ় প্রত্যয় ও ইচ্ছা থাকেনা এবং বিরোধিতা করার চিন্তা-ভাবনাও থাকেনা- আল্লাহ তা’আলা দায়ী না করেন তাহলে কি করে ভাবতে পারি যে, কবিতা গাওয়া ও নৃত্যের জন্য দায়ী করবেন। (ইমাম গাজ্জালী, এহইয়াউ উলুমুদ্দিন, মিসর ঃ দারুশ শা’আব, কিতাবুস সিমা, পৃষ্টা ১১৪৭)
চলবে….
.

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন