আমার ব্লগ তালিকা

মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০১৫

শিশু রাজন হত্যাঃ দ্রুত দায় দায়ী ও বিচার নিশ্চিৎ করুন।


চুরির শাস্তি কি খুন?
আইনপতিরা (!) জবাব দে!

রাজনের মতো অসহায় ও অবুঝ বালকগুলো আজ চোর কেন? সরকার ও অর্থপতিরা জবাব দে!

আগে একটি ঘটনা শুনুন।
খুব সম্ভব আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর রাঃ এর খেলাফতকাল। একজন দোকানের কর্মচারীর উপর চুরির অভিযোগ উঠলো। ইসলামের আঈন খুবই কঠোর। চোরের হাত কেটে দেয়া হবে। খলিফা উমর রাঃ তার বিচার ফায়সালা করবেন। অভিযোককারী দোকানের মালিকের এই বিশ্বাস...

কিন্তু উমর রাঃ সরাসরি বিচারে গেলেন না। তিনি অভিযুক্ত কর্মচারীকে ডেকে পাঠালেন উপযুক্ত তদন্তের জন্যে। প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্ত কর্মচারী সন্দহাতীতভাবে চোর সাব্যস্ত হলো। তথাপিও উমর রাঃ বিচারে ধিরতা অবলম্বন করলেন। কিন্তু কেন?

তিনি চোরকে একান্তে ডাকলেন। অনেকটা কঠোরতার সাথে জিজ্ঞেস করলেন, সত্যিই কি তুমি চুরি করেছ?

চোরের চেহারায় প্রান্তিক অসহায়ত্য ফুটে উঠলো। কন্ঠে তার বাধভাঙ্গা ব্যাকুলতা। উমরের রাঃ কঠোর শাষণের ভিতির রেখা  তার কপালে প্রতিয়মান। রুক্ষ ও কাঁপা কন্ঠে সে বল্লো, জ্বী হ্যাঁ হুজুর আমি চুরি করেছি। এটা শত ভাগ সত্য...

সততায় অবিচল তার কণ্ঠধ্বণীর পেছনে খলিফার ভাবাবেগ উকি দিলো। তিনি আবার বল্লেন, সত্যিই তুমি চুরি করেছ?
চোরের কন্ঠে সততার একই পাল্টা প্রতিধ্বণি বাঁজলো, হ্যাঁ হ্যাঁ আমি চুরি করেছি। আমি চোর। আমার বিচার করুন হুজুর। আমার হাত কেটে দিন...

খলিফার ভাবনায় অন্ত এলোনা। চোরের কন্ঠের দ্বিধাহীনতা আর অসহায়ত্বের উচ্ছল ধ্বনি খলিফার ভাবনায় গতির সঞ্চয় করলো। তিনি মায়াভরে আবার জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা তুমি কেন চুরি করতে গেলে? তোমার নির্ধারিত বেতনেতো তোমার সংসার বেশ কেটে যেত?

এবার চোরের সিক্ত চোখজোড়ার অসহায়ত্ব আরো দ্বীগুণ বেড়ে গিয়ে মাটিতে দাপাদাপি শুরু করলো। পিন্জর ভেঙ্গে পুন্জিভুত দুঃখের একটি দ্বীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে কেঁদে ফেল্ল চোর। হুজুর, বেতনে আমার সংসার ঠিকই স্বাচ্ছন্দে কেটে যায়। কিন্তু গত কয়েকমাস আমার মুনিব আমার বেতন আটকে রেখেছে। আমার ঘরের ক্ষুধার্ত সন্তানদের আহাজারি আমি সইতে পারিনি হুজুর। আমার বিবির ছেড়াবস্ত্রে ঢাকা শুকনো মুখ আমাকে ভিষণ আহত করেছে হুজুর। তাই আমি উপায় না পেয়ে চুরি করতে বাধ্য হয়েছি। আমি আমার সন্তানদের জন্য চুরি করেছি। আমার বিচার করুন হুজুর। আমি আমার স্ত্রীর লজ্ঞা নিবিরণের দায়ে চুরি করেছি। আমার হাত কেটে দিন হুজুর... আমার হাত কেটে দিন...

খলিফার চোখে পানি টলমল করতে লাগলো। অসহায় চোরের চোখের পানিযে এক সাগর জলকেও হার মানায়...
তাত্‍ক্ষনিক খলিফা দোকানের মালিককে ডেকে পাঠালেন। ক্ষিপ্তস্বরে ঘোষণা দিলেন, কসম আল্লাহর! এজাতীয় কারণে আর যদি কেউ চুরি করে তবে চোরের আগে আমি মালিকের হাত কেটে দিব...
(চিত্রায়ীত ও সংক্ষেপিত)

সোনালী যুগের এঘটনাটি আমাদের পাঁচটি মূল শিক্ষা দেয়।
এক. চোরের বিচার হবে কিন্তু প্রথমত সঠিক তদন্তে প্রমাণ হওয়া আবশ্যক।
দুই. অভিযুক্ত ব্যক্তির স্বীকারোক্তিও এখানে সতর্কতার সাথে বিবেচ্য।
তিন. বিচার করবে নির্ধারিত দায়ীত্বশীলগণ। যে কেউ নয়।
চার. চুরির সর্বোচ্চ বিচার পর্যায়ক্রমে হাত-পা কর্তণ। খুন নয়।
পাঁচ. সংঘটিত চুরির দায় ও দায়ী চিন্থিত করে সে ব্যাপারে উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেয়াও সমভাবে জরুরী।

এবার আসুন। রাজনের বিষয়টি আমরা একটু খতিয়ে দেখি।
¤রাজন যে চুরি করেছে তাকি আদৌ প্রমানিত হয়েছে? অবশ্যই না।
¤ অভিযুক্ত রাজনের স্বীকারোক্তির কি সামান্যতম মুল্যায়ণ করা হয়েছে? অবশ্যই না। সেতো বরাবরই আমৃত্যু চিত্‍কার করে বলেছে আমি চুরি করিনি... আমি চুরি করিনি...
¤ চুরির বিচার করবে প্রশাসন (যদি প্রমানিত হয়) তাহলে ঘাতকগোষ্ঠীকে আইন হাতে তুলে নেয়ার অধিকার দিলো কে?
¤ চুরির প্রাথমিক সর্বোচ্চ শাস্তি হাত কাটা (যদি প্রমাণিত হয়) তাহলে রাজনকে খুন করার অধিকার কে কোথায় পেলো?
¤ সর্বোপরি ধরেই নিলাম রাজন চুরি করেছে যদি করে থাকে। এসব অসহায় গরীবশ্রেণীর অবুঝ  শিশুরা পেটের দায়ে যদি চুরির মতো অপরাধে লিপ্ত হয় তবে এর দায় কার? এর জন্য দায়ী কে? অর্থপতিরা জবাব দে? সরকার জবাব দে?

যদি জবাব না থাকে তবে শোন! আমি দ্বিধাহীন চিত্তে বলি, নিশ্চয় এটি একটি বিচারবহির্ভুত নির্মম হত্যাকান্ড। অনতিবিলম্বে হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ বিচার করা হোক। যদি অভিযুক্তরা পাড় পেয়ে যায় তবে শেষ কথাতো এটাই বলতে হয়, এ হত্যাকান্ডের একমাত্র দায় ও দায়ী সরকার। তাই জনতার আদালতে সর্বশেষ এ সরকারেরই ফাঁসী কার্যকর করা ইসলামের দাবী...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন