আমার ব্লগ তালিকা

শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০১৫

ইনসাফ ও ন্যায়বিচারের গুরুত্ব



adalমাওলানা শায়েখ আব্দুল কাইয়ূম: 

ধরার বুকে ইনসাফ ও ন্যায় বিচার কায়েম নিয়ে আসে নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও শান্তির ফল্গুধারা। এর বিপরীতে যুলুম, নিপীড়ন ও অন্যায় নিয়ে আসে নিরাপত্তাহীনতা, অস্থিতিশীলতা ও অশান্তির সয়লাব। ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক যিন্দেগীর সকল পর্যায়ে ইনসাফ ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাকে ইসলাম সমধিক গুরুত্ব প্রদান করেছে। পবিত্র কুরআনে ইনসাফ কায়েমের নির্দেশ প্রদান করে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ নির্দেশ দিচ্ছেন ইনাসফ ও ইহসান কায়েমের জন্য।’ তিনি আরও এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনসাফকারীদের পছন্দ করেন।’ প্রিয় নবীজী (সা.) এরশাদ করেন: ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ ইসসাফকারীদের পছন্দ করেন।’ প্রিয় নবীজী (সা.) এরশাদ করেন: ‘নিশ্চয়ই ইসনসাফকারীগণের মর্যাদা হচ্ছে-(ক্বিয়ামতের দিন) তাঁরা আল্লাহর নিকট নূরের মিম্বরে আসন  গ্রহণ করবেন। যারা এর ধরাতে তাদের লোকজনের মধ্যে ফায়সলার ব্যাপারে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করতো।’-(মুসলিম)
ইনসাফের  মর্যাদা ইসলামে অতি বিশাল। এর পুরস্কারও অতি মহান। ইনসাফের রয়েছে বিভিন্ন স্তর ও মর্যাদা। সকল পর্যায়ে ইনসাফ কায়েম করা সংশ্লিষ্টদের প্রতি দায়িত্ব। জনগণের প্রতি ইনসাফ কায়েম করা শাসকদের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার প্রাপকদের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে। আর যকন লোকদের মধ্যে ফায়সালা কর, ন্যায় বিচারের ফায়সালা করতে। কত সুন্দর নসীহতইনা আল্লাহ করেন তোমাদের উদ্দেশ্যে।-(নিসা: ৫৮) প্রিয় নবীজী (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যেদিন কোন ছায়া থাকবে না, সেদিন (ক্বিয়ামতের দিন) আল্লাহ তাঁর (আরশের) ছায়ার নিচে জায়গা দেবেন সাত ধরনের লোকদেরকে। তাদের মধ্যে একদল হচেছ ঐ সমস্ত শাসক যারা এ ধরাতে ইনসাফ কায়েম করেছিলো-(বুখারী, তিরমিযী, নাসাঈ)। আল্লাহর প্রিয় নবী দাউদ (আ.) একাধারে ছিলেন নবী ও রাষ্ট্র মতার অধিকারী। তাঁকে দায়িত্ব দিয়ে আল্লাহ তাআলা নসীহত করেছেন: ‘হে দাউদ, আমি তোমাকে ভূপৃষ্ঠে খলীফার দায়িত্ব প্রদান করলাম। তুমি মানুষের মাখে ফায়সালা করবে ন্যায়ের ভিত্তিতে। সাবধান! প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না, তাহলে তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে।-(ছোয়াদ: ২৬) প্রিয় নজীবী (সা.) এরশাদ করেন: ‘দুনিয়ার বিচারকগণ তিনভাগে বিভক্ত-শুধু একদল জান্নাতী হবে, আর বাকি দু’দলের ঠিকানা হবে জাহান্নাম। যে বিচারক প্রকৃত সত্য উপলব্ধি করে হক ফায়সালা প্রদানে সম হয়েছে, সে হবে জান্নাতী। আর যে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের কোন প্রচেষ্টা না করেই আন্দাজের ভিত্তিতে না হক ফায়সালা করে দিল সেও হয়ে যাবে জাহান্নামী’-(আবু দাউদ, ইবন মাজাহ)। তবে কেউ যদি সর্বাত্মক চেষ্টা করে যদি হক ফায়সালা করতে সম হয় তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ পুরস্কার। আর যদি চেষ্ট সত্ত্বেও ফায়সালায় অনিচ্ছাকৃতভাবে ভুল হয়ে যায়, তার জন্য রয়েছে একটি পুরস্কার। (বোখারী)
নিজ সন্তান এবং পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও ইনসাফ কায়েম করা জরুরি। প্রখ্যাত সাহাবী নোমান বিন বাশীর (রা.) নিজের র্সাধিক প্রিয় সন্তানটিকে প্রিয় নবীজী (সা.)’র কাছে নিয়ে এসে বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আমার এ সন্তানটিকে আমার ক্রীতদাসটি দান করলাম। আপনাকে তার সাি বানাতে এসেছি। প্রিয় নবীবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, তোমার প্রত্যেক সন্তানকেই কি এমন করে একটা ক্রীতদাস দান করেছে? তিনি বললেন, না!’  প্রিয় নবীজী (সা.) বললেন, তুমি এমন অন্যায় কাজে আমাকে সাি বানাতে এসেছ! আল্লাহকে ভয় করো। তোমাদের সন্তানদের মধ্যে ইনসাফ ক্বায়েম করো’-(বুখারী, মুসলিম)। পারস্পরিক কথোপকথনেও ইনসাফ কায়েমের নির্দেশ দিযে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন: যখন কোন কথা বলো, তখন ন্যায়ের ভিত্তিতে বলো, এমন কি যদি তা তোমার আপন লোকের ব্যাপারেও হয়’-(আনআম: ১৫২)। তিনি আরও এরশাদ করেন:‘হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্য ন্যায় স্যা দানের ব্যাপারে অবিচল থাকবে।’-(মায়েদা: ৮) তিনি আরও বলেন: ‘হে ঈমানদার লোকেরা তোমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অবিচল থাকবে, আল্লাহর জন্য স্যাদাতা হিসেবে, এমনকি তা যদি তোমাদের নিজেদের স্বার্থের বিরুদ্ধে বা মাতাপিতা এবঙ আপনজনদের বিরুদ্ধেও চলে যায়।’-(নিসা: ১৩৫)
সর্বাবস্থায় মু’মিনদেরকে ইনসাফ কায়েম করতে হবে। এমনকি মুসলমানদের সাথে কাফিরদের লেনদেন ও সম্পর্কের েেত্রও ইনসাফের নীতিতে অবিচল থাকতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি এরশাদ করেন:‘কোন (কাফির) কওমের সাথে দুশমনি থাকলে তা যেন তোমাদেরকে ন্যায় বিচার থেকে সরে আসার মতো অপরাধে লিপ্ত না করে ফেলে। ইনসাফ ক্বায়েম কর, সেটা হচ্ছে তাকওয়া অর্জনে সহায়ক।’ (মায়েদা: ৮) ‘নিজ ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের লোকদের প্রতি অবিচার করলে, প্রতারিত করলে, কোন অসুবিধে নেই, এমন ধারণার সুযোগ ইসলাম নেই। শুধু ইহুদী জাতি এমন অন্যায় ধারণা পোষণ করার কারণে আল্লাহ তাদের ব্যাপারে বলেন, ‘…তারা বলতো যে উম্মী (অইহুদী)দের অধিকার বিনষ্ট করতে আমাদের কোন পাপ নেই।-(আল ইমরান: ৭৫)
ইসলামের ন্যায় প্রতিষ্ঠার এত গুরুত্ব এ কারণে দেয়া হয়েছে যে এর বিপরীতে অন্যায়, যুলুম ক্বায়েম হয়ে গেলে পৃথিবী নামক এক সুন্দন নত্রটিতে মানুষের জীবনে নেমে আসবে দ্বন্দ্ব, হানাহানি, যুদ্ধ, রক্তপাত ও নিরাপত্তাহীনতা। সেটাই আজকের ঝঞ্ঝাবিুদ্ধ পৃথিবীর যাবতীয় অনিষ্টের মূল কারণ। ফিলিস্তিনের মযলুম মুসলমানদেরকে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করে জবরদখলের মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয়েছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাঈলের। ফিরিস্তিনী প্রতিরোধ আন্দোলনের অগ্রদূত ও প্রেরণার উৎস বর্ষীয়ান জননেতা ফযর নামাজ আদায় শেষে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তনের সময়ে হুইল চেয়ারে থাকাবস্থায় ইসরাঈলী সন্ত্রাসী প্রধানমন্ত্রীর শ্যারণের ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে নিপ্তি পেণাস্ত্রের আঘাতে শাহাদাত বরণ করলেন। শেখ আহমদ ইয়াছিনের প্রতি এ আঘাত ছিল ইসরাঈলী রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের একটি ঘৃণ্য উদাহরণ। অথচ বিশ্ব সম্প্রদায় এ সন্ত্রাসের প্রতিবাদ করলো অত্যন্ত নম্রভাষায়। প্রকৃত পে ফিলিস্তিনী মুক্তিকামী জনতাকে মুক্তিযোদ্ধা না বলে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করাটাই একটা বিরাট অবিচার, অন্যায় এবং যুলুম। বিশ্ব সম্প্রদায় এহেন যুলুম থেকে মধ্যপ্রাচ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় যদি এগিয়ে আসে, তখনই কেবল অশান্ত মধ্যপ্রাচ্য শান্তির আশা করতে পারে। আমরা দোয়া করি শহীদ শায়খ আহমদ ইয়াছীনকে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন। আমীন।
লেখক: বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও খতিব ইস্ট লন্ডন মসজিদ
২৭৪ বার পাঠ করা হয়েছে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন